খালেদা জিয়ার হত্যাচেস্টা মামলা নিয়ে যা বললেন জায়েদ খান
প্রখ্যাত ঢাকাই চলচ্চিত্র অভিনেতা জায়েদ খানকে হত্যাচেষ্টার মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে
ঢাকাই চলচ্চিত্রের প্রখ্যাত অভিনেতা জায়েদ খানকে ২০১৫ সালের একটি ঘটনায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা ও হত্যাচেষ্টার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মামলাটি সম্প্রতি নতুন করে আলোচনায় এসেছে, যেখানে জায়েদ খানসহ মোট ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে, এবং বিভিন্ন মহলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে।
জায়েদ খানের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনার পর, অবশেষে সোমবার (২৬ আগস্ট) জায়েদ খান সংবাদমাধ্যমে মুখ খুলেছেন। তিনি এই মামলার বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “আমি নাকি ২০১৫ সালে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা করে তাকে হত্যাচেষ্টা করেছি। এই ধরনের একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে আমাকে। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলা এবং মিথ্যা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে তৈরি।”
জায়েদ খান আরও বলেন, “আমি একজন শিল্পী এবং বাংলাদেশের একজন দায়িত্বশীল নাগরিক। আমি আমার দেশ ও দেশের মানুষকে ভালোবাসি। কেউ আমাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করতে পারবে না। আমি কোনো ধরনের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নই। আমার কোনো অপরাধ নেই, দুর্নীতির সঙ্গে কোনো সম্পর্ক নেই।”
তিনি বলেন, “আমি বেশিরভাগ সময়ই শো নিয়ে দেশের বাইরে থাকি। ২০১৫ সালের ছাত্র আন্দোলনের প্রায় এক মাস আগে থেকে আমি অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, এবং সর্বশেষ আমেরিকায় শো নিয়ে খুব ব্যস্ত ছিলাম। শিল্পী হিসেবে মানুষের বিনোদন দেয়াই আমার কাজ। কিন্তু এখন আমার নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে, যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।”
মামলার পটভূমি
রোববার (২৫ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট জাকী আল ফারাবীর আদালতে এই মামলাটি দায়ের করা হয়, যেখানে বাদী হিসেবে ছিলেন ব্যান্ড শিল্পী আসিফ ইমাম। বাদী মামলায় উল্লেখ করেছেন, ২০১৫ সালের ২০ এপ্রিল নির্বাচনী প্রচারণার সময় বিএনপির কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত একটি পথসভায় বেগম খালেদা জিয়ার গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। অভিযোগে বলা হয়েছে, হামলাকারীরা খালেদা জিয়াকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার গাড়িবহরে অস্ত্রসহ আক্রমণ চালায়, যার ফলে গাড়িবহরের বেশ কিছু গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং চারটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এছাড়া, হামলায় বেশ কিছু নেতাকর্মী আহত হন এবং নিরাপত্তারক্ষীদেরও আঘাত করা হয়।
মামলায় আরও উল্লেখ করা হয় যে, হামলার সময় উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং পথচারীরাও আহত হন। হামলার সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দ্রুত ব্যবস্থা নেয়, তবে গাড়িবহরের ক্ষতি এবং আহত ব্যক্তিদের জন্য পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়ে।
মামলার অন্যান্য আসামিরা
এই মামলায় জায়েদ খানের পাশাপাশি আরও বেশ কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন শেখ সেলিম, শেখ হেলাল, কর্নেল (অব.) ফারুক খান, ফজলে নূর তাপস, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, সাবের হোসেন চৌধুরী, মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী, সাইদ খোকন, বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন, সাংবাদিক শাবান মাহমুদ, আবু আহম্মেদ মন্নাফী, এবং মতিঝিল জোনের তৎকালীন এডিসি মেহেদী।
এই মামলার আসামিদের মধ্যে বেশিরভাগই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী এবং তাদের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবস্থান বেশ শক্তিশালী। বিষয়টি নিয়ে এখন আদালতে শুনানি চলছে এবং মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। মতিঝিল থানা পুলিশকে মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মামলার প্রভাব ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া
জায়েদ খান এবং অন্যান্য আসামিদের বিরুদ্ধে করা এই মামলা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকেই এই মামলাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করেছেন। বিশেষ করে জায়েদ খান একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পী হওয়ায় তার সমর্থকেরা এই মামলাকে ভিত্তিহীন বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারা মনে করছেন, জায়েদ খানকে রাজনৈতিকভাবে হেনস্থা করার উদ্দেশ্যে এই ধরনের মামলা করা হয়েছে।
তবে অন্যদিকে, মামলার বাদী পক্ষ এই হামলার ঘটনার যথাযথ বিচার দাবি করছেন। তারা মনে করছেন, ওই সময়কার পরিস্থিতি খুবই গুরুতর ছিল এবং এ ধরনের হামলা দেশের আইনের প্রতি অবমাননা। তাদের মতে, দেশের শীর্ষ রাজনীতিবিদের গাড়িবহরে হামলা একটি মারাত্মক অপরাধ, এবং এর জন্য দায়ীদের শাস্তি হওয়া উচিত।
জায়েদ খানের আশা ও প্রত্যাশা
জায়েদ খান এই মামলা সম্পর্কে তার দৃঢ় মতামত প্রকাশ করে বলেন, “আমার বিশ্বাস, দেশের বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রধান ড. ইউনূস সাহেব এই মামলার ভিত্তিহীনতা বুঝতে পারবেন এবং ন্যায়বিচার করবেন। তিনি ছাত্রদের নিয়ে দেশ সংস্কারে কাজ করছেন, এবং আমি আশাবাদী যে তিনি এমন মিথ্যা মামলার বিষয়েও সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।”
তিনি আরও বলেন, “একজন শিল্পী হিসেবে আমি সবসময় দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। আমি দেশের বাইরে শো করে বাংলাদেশের সংস্কৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এমন অবস্থায় মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে হেনস্থা করা খুবই দুঃখজনক।”
এই মামলার ফলাফল এবং এর বিচার প্রক্রিয়া এখন অনেকের নজরে রয়েছে। জায়েদ খান একজন প্রখ্যাত চলচ্চিত্র শিল্পী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগগুলো অনেক বেশি আলোচিত হচ্ছে। মামলার তদন্ত কীভাবে এগোয় এবং এর পরিণতি কী হয়, তা দেশের রাজনৈতিক এবং সাংস্কৃতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে।